মেট্রো রেল শুধু যাত্রীবাহী পরিবহনই নয়, এবার এটি হতে চলেছে আপনার ব্যবসার প্রসারের এক নতুন দিগন্ত। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) মেট্রো রেল স্টেশনগুলোতে যাত্রীসেবার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যবহারের সুযোগ চালু করতে যাচ্ছে। এটি ডিএমটিসিএলের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা তাদের আয়ের উৎস বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য স্টেশনগুলোতে নতুন সেবা যুক্ত করবে।
ফার্মগেট ও কাওরান বাজার: বিশাল বাণিজ্যিক ফ্লোর#
প্রাথমিকভাবে এমআরটি লাইন-৬ এর ফার্মগেট ও কাওরান বাজার স্টেশনকে বেছে নেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য। এই দুটি স্টেশন তিন তলাবিশিষ্ট এবং এদের দ্বিতীয় তলায় প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট ফাঁকা জায়গা বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দেওয়া হবে। এই বিশাল ফ্লোরগুলো বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত, যেমন শপিংমল, ডেইলিশপ, ব্যাংক, অফিস বা অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি ডিএমটিসিএলের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিএমটিসিএল তাদের বাণিজ্যিক স্পেস ভাড়া বা ইজারা নীতিমালা ২০২৩ (প্রথম সংশোধনীসহ) অনুযায়ী এই ফ্লোরগুলো ভাড়া দেবে।
আবেদনের প্রক্রিয়া ও সময়সীমা#
আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিএমটিসিএলের অনুকূলে প্রতি স্টেশনের জন্য ১০ হাজার টাকার পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট (অফেরতযোগ্য) জমা দিয়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
- আবেদনপত্র সংগ্রহের সময়: ৪ মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত (অফিস চলাকালীন সময়ে)।
- আবেদনপত্র সংগ্রহের স্থান: উত্তরা দিয়াবাড়িতে অবস্থিত মেট্রোরেল ভবনের ৭৩১ নম্বর কক্ষ (লেভেল-৭)।
- আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ: ১৫ জুন, বেলা ৩টা পর্যন্ত।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য ডিএমটিসিএলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.dmtcl.gov.bd ভিজিট করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভাড়া ও ইজারার শর্তাবলী#
জানা গেছে, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই স্পেসগুলো ভাড়া দেওয়া হবে। ভাড়ার প্রস্তাব বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স বা যমুনা ফিউচার পার্কের সমান বা তার চেয়ে বেশি হতে হবে, যা বাণিজ্যিক স্পেসের প্রিমিয়াম মূল্য নির্দেশ করে। ইজারার মেয়াদ ধরা হয়েছে ১০ বছর, তবে এটি নবায়নযোগ্য নয়।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ফার্মগেট ও কাওরান বাজার স্টেশনে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের দুটি বড় ফ্লোর রয়েছে। এছাড়াও, লাইন-৬ এর বাকি স্টেশনগুলোতে গড়ে ১৫০ বর্গফুট আয়তনের তিন থেকে চারটি ছোট কক্ষ রয়েছে, যা ভিন্ন ধরনের ব্যবসার জন্য ইজারা দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে বড় স্পেসগুলো ভাড়া দেওয়া হবে, এরপর ছোট কক্ষগুলোর জন্য আবেদন আহ্বান করা হবে।
কেন এই বাণিজ্যিক উদ্যোগ?#
মেট্রো রেল সীমিত পরিসরে চালু হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এবং ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে পুরো রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ডিএমটিসিএলের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছিল ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে ২৪৩ কোটি ৯১ লাখ টাকায় দাঁড়ায়।
তবে এই বিপুল আয় দিয়েও সব খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। দৈনন্দিন ব্যয়ের পাশাপাশি জাইকা (JICA) থেকে নেওয়া ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকার বিশাল ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে স্টেশনগুলোর ফাঁকা জায়গা ভাড়া দেওয়ার উদ্যোগকে ডিএমটিসিএল একটি সম্ভাবনাময় পথ হিসেবে দেখছে। এটি কেবল আর্থিক স্থিতিশীলতা আনবে না, বরং যাত্রীদের জন্য স্টেশনগুলোতে আরও বৈচিত্র্যময় সেবা উপলব্ধ করবে।
আপনার ব্যবসা প্রসারের জন্য মেট্রো রেল স্টেশনগুলোর এই বাণিজ্যিক স্পেসগুলো কতটা আকর্ষণীয় বলে মনে করেন? আপনার মতামত আমাদের জানান!